শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শনিবার ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব

মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
29 ভিউ
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাব

কক্সবংলা ডটকম(১৯ মার্চ) :: দেশে ভোগ্যপণ্যের দামের লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাচ্ছে না। সরকারের দিক থেকে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সর্বশেষ ২৯টি ভোগ্যপণ্যের মূল্য বেঁধে দেওয়া হলেও এর কোনোটিই নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। সব মিলিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।

আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় অনেককে সঞ্চয় ভাঙতে হচ্ছে। যাদের সেই সুযোগ নেই তারা প্রয়োজনের তালিকা কাটছাঁট করে কিংবা ধার-দেনা করে চলছেন।

তবে সুযোগমতো ঠিকই অতিরিক্ত মুনাফা করে নিচ্ছেন ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায়ীরা।

ভোক্তার পকেট ফাঁকা করে নিজেদের ব্যাংক হিসাব স্ফীত করছেন তারা। দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকে খাত ও ধরনভিত্তিক আমানতের সর্বশেষ হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনেও এর প্রমাণ মিলেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ বেড়েছে ৪০ হাজার কোটির বেশি টাকা।

অথচ একই সময়ে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের ব্যাংক হিসাবের আমানত কমে গেছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, সরবরাহ ও বিপণনে জড়িতদের টাকা জমা থাকে মূলত পাঁচ ধরনের ব্যাংক হিসাবে।

এগুলো হলো— কৃষকের ব্যক্তিগত হিসাব, কৃষি ও কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের হিসাব, আমদানি-রপ্তানিকারকদের হিসাব, ভোগ্যপণ্য বিপণনকারীদের ব্যক্তিগত হিসাব এবং শিল্পপতিদের ব্যক্তিগত হিসাব।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে কৃষিপণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ও আমদানিকারকদের আমানত কমলেও বাকি তিন ধরনের হিসাবে আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে। এরমধ্যে অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যক্তিগত হিসাবে আমানতের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ২৬ হাজার ১৭১ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছরের শুরুতে এই আমানতের পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ছয় মাসের ব্যবধানে ব্যক্তি হিসাবে আমানত বেড়েছে ৪০ হাজার ৫৭১ কোটি টাকা।

অন্যদিকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জমা থাকা ব্যাংক হিসাবকে ধরা হয় স্বল্প আয়ের মানুষের আমানত হিসাব। গত ডিসেম্বরে দেশের ব্যাংক খাতে এ ধরনের হিসাব সংখ্যা ছিল ১৩ কোটি ৮৯ লাখ ৬১ হাজার ৯৫টি। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ৮০ হাজার ৯৬ কোটি টাকা। এর আগে গত জুনে এ ধরনের ১৩ কোটি ২০ লাখ ৮৭ হাজার ২২০টি হিসাবে টাকার পরিমাণ ছিল ৮২ হাজার ৯১ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ছয় মাসে স্বল্প আমানতের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বাড়লেও তাতে টাকার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া ব্যাংকে জমা রাখা টাকা খরচের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

একইভাবে আর্থিক সংকটের কারণে সাধারণ মানুষ সঞ্চয়পত্রও ভেঙে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে যে পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে, ভাঙানো হয়েছে তার চেয়ে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বেশি। শুধু জানুয়ারি মাসে এই ব্যবধান ছিল ১ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেলে সাধারণ মানুষ প্রথমত তাদের ব্যাংক হিসাবের টাকা উত্তোলন করে তা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। সে বিবেচনায় গরিব মানুষের ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকা কমার কারণ মূল্যস্ফীতি—এতে কোনো সন্দেহ নেই।

অন্যদিকে ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবে আমানতের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে দুটি কারণ থাকতে পারে। একটি হচ্ছে, সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধির কারণে। আবার এমনও হতে পারে, ব্যবসায়ীর গুদামে আগের পণ্য ছিল, হঠাৎ দাম বাড়ার কারণে তিনি সুবিধা পেয়েছেন। এটাকে অর্থনীতির ভাষায় উইনফুল বেনিফিট বলে। উন্নত দেশে এই বেনিফিটের জন্য ট্যাক্স আরোপের ব্যবস্থা আছে। এই ট্যাক্সের টাকা সাধারণ মানুষের কল্যাণে ব্যয় করা হয়। বাংলাদেশেও সে ধরনের আইন হওয়া উচিত।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্য বাড়লেও কৃষি ও কৃষিভিত্তিক পণ্য উৎপাদক ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক আমানত কমেছে। জুন শেষে তাদের ব্যাংক হিসাবে ছিল ১৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। কিন্তু ছয় মাসের ব্যবধানে ৮৯৫ কোটি টাকা কমে ১২ হাজার ৪৪৭ কোটিতে নেমে এসেছে।

একইভাবে আমদানি-রপ্তানিকারকদের ব্যাংক হিসাবে টাকার অঙ্ক ২০ হাজার ৫৯২ কোটি থেকে কমে ২০ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ ছয় মাসে এই শ্রেণির হিসাবে আমানত ১২২ কোটি টাকা কমে গেছে।

তবে একই সময়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের ব্যাংক হিসাবে টাকার পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ব্যবসায়ী বা শিল্পপতিদের ব্যক্তিগত হিসাবে আমানত বেড়েছে ১ হাজার ৩১০ কোটি টাকা। ডিসেম্বর প্রান্তিকে শিল্পপতিদের (ব্যক্তিগত) হিসাবে জমা ছিল ২ লাখ ৬৩৯ কোটি টাকা। এর আগে জুন প্রান্তিকে এর পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।

একই সময়ে কৃষকের ব্যাংক হিসাবে থাকা টাকার পরিমাণ বেড়েছে ২ হাজার ২৪ কোটি। জুন মাসে কৃষকদের হিসাবে ৩২ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা থাকলেও ডিসেম্বরে আমানত বেড়ে ৩৪ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে ‘কৃষক’ উল্লেখ করা হলেও ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব হিসাবের বেশিরভাগই আড়তদারসহ মধ্যস্বত্বভোগীদের।

প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দেশে ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সবচেয়ে বেশি সুফল পেয়েছেন পণ্য সরবরাহ ও বিপণনকারী ব্যবসায়ীরা। মূলত এ ব্যবসায়ীরাই পণ্য মজুত ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তারাই কারসাজির মাধ্যমে একেক সময় একক পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেন।

সিন্ডিকেট করে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি এবং ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের ব্যাংক আমানত বেড়ে যাওয়া সম্পর্কে মন্তব্য চাওয়া হলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ‘বর্তমানে দেশে ভোগ্যপণ্যের আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন চার থেকে পাঁচজন শিল্পপতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সরকার পর্যন্ত সবাই তাদের ওপরই নির্ভরশীল।

অথচ বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়লেই পাইকারি ব্যবসায়ী বা আড়তদারদের দিকে আঙুল তোলা হয়। গণহারে এভাবে আঙুল তোলা ঠিক নয়। কেন ৪০ থেকে ৪৩ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ভোগ্যপণ্যের পুরো নিয়ন্ত্রণ মাত্র ৫-৬ জনের হাতে চলে গেল—তার কারণ খুঁজে বের করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত বাড়ার মানেই তারা সিন্ডিকেট করেছে—এটা বিশ্বাস করি না। তবে সত্যিই কেউ এমন কিছু করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।’

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে ব্যাংকের ঋণ বিতরণের সীমা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বাজারে এর প্রভাবও পড়েছে। আশা করি, ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে।’

29 ভিউ

Posted ১০:৪৮ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com